নিউমার্কেটে র্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি; মাইক্রোবাসসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের আট সদস্য গ্রেফতার

রাজধানীতে র্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় মাইক্রোবাসসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের আট সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির নিউমার্কেট থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। মোঃ আল আমিন হাওলাদার (৪০), ২। মোঃ ওমর ফারুক (৩৪), ৩। মোঃ ফারুক বেপারী (৩৯), ৪। মোঃ শহিদুল ইসলাম শেখ (৪১), ৫। মোঃ মানিক (২৭), ৬। জহিরুল ইসলাম জহির (৪৮), ৭। আল-আমিন আহম্মেদ (৪০) ও ৮। মোঃ বারেক (৪৪)। এ সময় তাদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, হকিস্টিক, বেতের লাঠি, নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন ও কিছু প্রসাধনী সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। নিউমার্কেট থানা সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম মো. ফারুক মিয়া (৫৫) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি. রাত আনুমানিক ২:০০ ঘটিকায় দুবাই থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছেন। তিনি এয়ারপোর্ট থেকে বাসার উদ্দেশে একটি প্রাইভেটকারে করে রওনা করেন। এ সময় তার সাথে ছিলো দুবাই থেকে আনা ১০০ গ্রাম স্বর্ণের কয়েকটি চুড়ি, দুটি স্যামস্যাং এস-২৫ আল্ট্রা মোবাইল ফোন, একটি আইফোন-১২, একটি অ্যাপল ম্যাকবুক, একটি আইপ্যাড, একটি অ্যাপল ওয়াচ, তিনটি কম্বল ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল। যার আনুমানিক মূল্য ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তিনি রাত আনুমানিক ৩:০০ ঘটিকায় নিউমার্কেট থানাধীন হাতিরপুল রোডে অবস্থিত তার বাসার সামনে উপস্থিত হলে তাকে অনুসরণ করা একটি কালো রঙের নোহা গাড়ি তার গাড়ির পথরোধ করে। পথরোধ করা গাড়ি থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত ৫/৬ জন লোক নেমে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে ফারুক মিয়াকে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে টেনেহিঁছড়ে নামায় এবং তার সাথে থাকা উক্ত মালামাল তাদের গাড়িতে নিয়ে চলে যায়। তারা ভিকটিম ফারুককে গাড়িতে করে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে এবং ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪:০০ ঘটিকায় ভিকটিমের মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে হাতিরঝিল এলাকায় তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এ ঘটনায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি. তারিখে ভিকটিম মোঃ ফারুক মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপির নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। থানা সূত্রে আরো জানা যায়, তদন্তাধীন এ মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ২৩ ফেব্রুয়ারি নিউমার্কেট থানাধীন এ্যালিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল মোড়ের পাকা রাস্তার উপর হতে মানিককে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন কাছিপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি হতে আল আমিন হাওলাদারকে এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী মডেল থানাধীন দপদপিয়া সেতুর টোল প্লাজা থেকে ওমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আল আমিন ও ওমর ফারুককে দুই দিনের পুলিশি রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ২ মার্চ ঢাকার রামপুরা থানাধীন পূর্ব রামপুর এলাকা থেকে রামপুরা থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ ফারুক বেপারী ও মোঃ শহিদুল ইসলাম শেখকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশি রিমান্ডে ফারুক ও শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ৭ মার্চ বংশাল থানা পুলিশের সহায়তায় ইংলিশ রোডের বাউফল স্টিল ফার্নিচারের সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে জহিরুল ইসলাম জহিরকে, দক্ষিণখানের কাওলা নামাপাড়া হাজীবাড়ি এলাকা হতে আল-আমিন আহম্মেদকে এবং সবুজবাগ থানাধীন দক্ষিণ মাদারটেক এলাকা হতে মোঃ বারেককে গ্রেফতার করা হয়। থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে আসা যাত্রীদের বিমান বন্দর থেকে অনুসরণ করে রাজধানীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে পথরোধ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা র্যাব, ডিবি ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে সর্বস্ব ডাকাতি করে নেয়। এভাবে উক্ত ডাকাত চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আনুমানিক ১২/১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, দেশের বিভিন্ন থানায় গ্রেফতারকৃত মোঃ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও ডাকাতিসহ মোট চারটি, মোঃ ফারুক বেপারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডাকাতির মোট দুটি, মোঃ শহিদুল ইসলাম শেখের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতিসহ মোট সাতটি, মোঃ মানিকের বিরুদ্ধে ছিনতাই, দস্যুতা, ডাকাতি ও মাদকসহ মোট নয়টি, জহিরুল ইসলাম জহিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতিসহ মোট বারোটি, আল-আমিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ও মাদকসহ মোট পাঁচটি, মোঃ বারেকের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ ও অস্ত্র আইনসহ মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, অন্যান্য লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা ও ডাকাত দলের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।